দৈনিক প্রত্যয় ডেস্কঃ গত চার বছরের মধ্যে ঢাকার বাতাস এখন সবচেয়ে কম দূষিত। গত বছরের এপ্রিলের সঙ্গে এ বছরের একই সময়ের বাতাসের মানের তুলনা করে দেখা যায়, বাতাসে দূষিত পদার্থের পরিমাণ অন্তত ১২ শতাংশ কম। বৈশ্বিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়ালের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের হিসাবে ঢাকার বায়ুর মান গত মাসে আগের বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ ভালো ছিল। আর স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের হিসাবে গত ৪৬ দিনে ঢাকার বায়ু আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ শতাংশ ভালো। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতিতে যানবাহন ও নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় বায়ুর মানের এই উন্নতি।
তবে বিশ্বের অন্যান্য দূষিত বায়ুর শহরের সঙ্গে তুলনা করলে ঢাকার উন্নতি বেশ কম। ভারতের দিল্লি ও কলকাতা, পাকিস্তানের করাচি, আফগানিস্তানের কাবুলের মতো শহরগুলো শীর্ষ ১০ দূষিত বায়ুর শহরের তালিকা থেকে সরে গেছে। কিন্তু গতকাল শনিবার সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ঢাকা দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে ১ থেকে ৫–এর মধ্যে ছিল। রাত সাতটায় ঢাকা দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে। প্রথমে ছিল ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা, তৃতীয় অবস্থানে ছিল ভিয়েতনামের হ্যানয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান বিভাগের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস যানবাহন ও নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে দূষণের প্রধান উৎস ইটভাটাগুলোর ৮০ শতাংশই খোলা, যে কারণে প্রত্যাশার তুলনায় উন্নতি কম।
পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকাসহ দেশের ১১টি প্রধান শহরের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে। গত ১৫ মার্চ থেকে সংস্থাটি ঢাকা ছাড়া আর কোনো শহরের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণের তথ্য প্রকাশ করছে না। ঢাকার বায়ুর মানের তথ্য দুই–তিন দিন পরপর হালনাগাদ করে পরিবেশ অধিদপ্তর। সংস্থাটি মার্চ ও এপ্রিলের মধ্যে বাতাসে সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম–১০ ও পিএম–২.৫ এর তুলনা করেছে। এতে দেখা গেছে, মার্চের তুলনায় এপ্রিলে পিএম–১০–এর পরিমাণ ১৬২ থেকে কমে ১৪৫ ও পিএম ২.৫–এর পরিমাণ ৬৮ থেকে কমে ৪৫ মাইক্রোগ্রাম হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের হিসাবে ঢাকার বায়ুর মান গত মাসে আগের বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ ভালো ছিল।
বায়ুর মানের এই উন্নতির কারণ হিসেবে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, মূলত দূষণের প্রধান উৎসগুলো এখন বন্ধ। যানবাহনগুলো আগের চেয়ে অনেক কম চলাচল করছে। শহরের বেশির ভাগ স্থানে নির্মাণকাজও বন্ধ। বিশেষ করে মেট্রোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বড় অবকাঠামোগুলোর নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় ধুলাদূষণ হচ্ছে না।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বায়ুমান বিশেষজ্ঞ আবদুস সালাম বলেন, ‘সরকারের উচিত হবে, লকডাউনের মাধ্যমে বায়ুর মানের যে উন্নতি হয়েছে, তা ধরে রাখার ব্যবস্থা করা। সে জন্য একসঙ্গে লকডাউন খুলে না দিয়ে আস্তে আস্তে খোলা এবং ভবিষ্যতে এই শহরের একেক স্থান একেক দিন বন্ধ রেখে বায়ুর মানের উন্নতি করা।’
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের হিসাবে, ঢাকায় খুবই অস্বাস্থ্যকর বাতাস ছিল, এমন দিনের সংখ্যা ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ থেকে ৯ মের মধ্যে ছিল ৫ দিন। এ বছর একই সময়ে তা কমে দুদিন হয়েছে। অস্বাস্থ্যকর দিন ১৬ থেকে কমে হয়েছে ১০ দিন। অন্যদিকে মাঝারি মানের বায়ু, বা ভালো বায়ুর দিন সংখ্যা গত বছর ছিল ২ দিন, এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ১২ দিন।
এ ব্যাপারে ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘সময়টিকে আরও গভীরভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। ঢাকার বায়ুদূষণের কোন উৎসগুলো কীভাবে কমানো যেতে পারে, তা–ও এর মধ্য দিয়ে চিহ্নিত করা যেতে পারে; যাতে ভবিষ্যতে ঢাকার বায়ুর মান ভালো করার পরিকল্পনা করা যায়।’
ডিপিআর/ জাহিরুল মিলন